আমরা যদি তাপকে একটা শক্তি হিসেবে মেনে নিই, তাহলে সাথে সাথে এরপরের যে বিষয়টা আমাদের জানতে হবে সেটা হচ্ছে কীভাবে তাপশক্তি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। সাধারণভাবে আমাদের ধারণা সব সময়ই শক্তির প্রবাহ হয় বুঝি বেশি শক্তি থেকে কম শক্তিতে। ছোট একটা গরম আলপিনে যে পরিমাণ তাপশক্তি রয়েছে তার থেকে অনেক বেশি তাপশক্তি রয়েছে এক গ্লাস পানিতে। কিন্তু গরম আলপিনটা আমরা যদি পানিতে ডুবিয়ে দিই তাহলে কিন্তু আলপিনের অম্ল তাপশক্তি থেকেই খানিকটা চলে যাবে গ্লাসের পানিতে। তার কারণ তাপশক্তির প্রবাহটা তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, এটা নির্ভর করে তাপমাত্রার উপরে। দুটো ভিন্ন তাপমাত্রার জিনিস যদি একে অন্যের সংস্পর্শে আসে তাহলে সব সময়ই বেশি তাপমাত্রা থেকে তাপ কম তাপমাত্রার জিনিসে যেতে থাকবে যতক্ষণ না দুটোর তাপমাত্রা সমান হচ্ছে।
আমরা এখনো কিন্তু “তাপমাত্রা" নামের রাশিটি সংজ্ঞায়িত করিনি। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে এটি এত ব্যবহার হয় যে বিষয়টি কী বুঝতে কারোই সমস্যা হয় না। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে পারি এটা হচ্ছে পদার্থের ভেতরকার অণুগুলোর গড় গতিশক্তির একটা পরিমাপ। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, তাপমাত্রা হচ্ছে সেই তাপীয় অবস্থা যেটি ঠিক করে একটা বস্তু অন্য বস্তুর সংস্পর্শে এলে সেটি কি তাপ দেবে নাকি ভাপ নেবে। বিষয়টা বোঝানোর জন্য আমরা পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতার সাথে তুলনা করতে পারি। যদি পানির দুটি পাত্রে পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা ভিন্ন হয় তাহলে পাত্র দুটিকে একটি নল দিয়ে একত্র করার পর কোন পাত্রে পানি বেশি কোন পাত্রে পানি কম সেটি পানির প্রবাহ ঠিক করবে না। কোন পাত্র থেকে কোন পাত্রে পানি যাবে সেটা নির্ভর করবে কোন পাত্রের পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা কত তার ওপর। সব সময়ই বেশি উচ্চতা থেকে পানি কম উচ্চতায় প্রবাহিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটি উচ্চতা সমান হয়ে যাচ্ছে। এখানে পানির পরিমাণটাকে তাপশক্তির সাথে তুলনা করতে পারি, পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতাকে তুলনা করতে পারি তাপমাত্রার সাথে। তাপমাত্রার বেলাতেও এটা সত্যি যে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটি বস্তুর তাপমাত্রা সমান হচ্ছে ততক্ষণ তাপ প্রবাহিত হতে থাকবে।
Read more